মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর, প্রধান পৃষ্ঠপোষক, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর। কর্মজীবনে তিনি দেশের স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম ল’ কলেজ থেকে এলএলবি করেছেন। ছাত্রজীবনে নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারী মুজিব কলেজের নাট্য সম্পাদক ছিলেন ছাত্রজীবনে। একই সাথে তিনি একজন শিশুসংগঠক ও সাংবাদিক। তিনি দেশের প্রথিতযশা ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি অবজারভারের পরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম শিশুকিশোর পত্রিকা কিশোর বাংলা’র সম্পাদক।
১৯৯৮ সালে মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর বাংলাদেশের শিশু কিশোরদের সৃজনশীল ও মননশীল বিকাশে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সাথে সম্পৃক্ত হন। তাঁর সম্পৃক্ততা সংগঠনের কর্মকাণ্ডে নিয়ে আসে নতুন গতি ও মাত্রা। শুরু থেকেই তিনি সংগঠনের বিভিন্ন কাজকর্মে ও অনুষ্ঠানে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও মুল্যবান মতামতের মাধ্যমে আন্তরিক সহযোগিতার হাত বাড়ান। তাঁর নানাবিধ অবদানের প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে জাতীয় সম্মেলনে ২০০১-২০০৩ সালের মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমর্থনে প্রথমবারের মতো তিনি সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব লাভ করেন।
তিনি দায়িত্ব নেবার কিছুদিন পর ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ঐসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর শুরু হয় অকল্পনীয় নিপীড়ন নির্যাতন। সেসময় আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে ঘরের বাইরে তো দূরের কথা ঘরের ভেতরে থাকাটাও হয়ে উঠে কষ্টসাধ্য ও আতঙ্কের। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ সংগঠনগুলোর কার্য্ক্রমে নেমে আসে অবর্ণনীয় স্থবিরতা ।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের উদ্যোগে ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা নেয় এক সাহসী উদ্যোগ। ২০০২ সালের সেই বিরূপ সময়ে যখন আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনই কোন আয়োজন করতে এগিয়ে আসতে পারেনি, সেখানে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে ৫ দিন ব্যাপী এক বিশাল কর্মসূচি গ্রহণ করি আমরা মূলত তাঁরই অনুপ্রেরণায়। যখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করতে রাষ্ট্রযন্ত্র কু-পরিকল্পনায় লিপ্ত, তখনই বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তৈরি করতে তিনি মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর এই কর্মসূচীর প্রস্তাব করেন ও উদ্যোগ নেন। তাঁর উদ্যোগ, উৎসাহ ও প্রেরণায় দেশের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে ৫দিন ব্যাপী কর্মশালা, জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠনের আয়োজন করা হলে সারাদেশে তা আওয়ামী লীগ ও তার অংগসংগঠনগুলোর মধ্যে সাহস যোগায়। আবার নবরূপে রাজপথে সবাই কাজ শুরু করে।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের আদলে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালাটি বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গসংগঠনের ক্ষেত্রে প্রথম। এই ৫ দিন ব্যাপী কর্মসূচীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার আন্তরিক অংশগ্রহন ও উপস্থিতি ছিল সত্যিই অনুপ্রেরনাদায়ক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পাঁচদিনই উপস্থিত ছিলেন এই কর্মসূচীতে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন আওয়ামী লীগ যুগ্ন-সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের সকল জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলাসহ আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনই তখন বড় কোন আয়োজন করতে সাহস করতোনা। কারণ, বঙ্গবন্ধুতনয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসকল অনুষ্ঠানে সবসময় তাঁর পক্ষ থেকে প্যান্ডেল ও মাইকের বন্দোবস্ত করে দিতেন। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে চলে আসা পিয়ারু সর্দারের প্যান্ডেল ও কল-রেডী মাইক ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাঁধা উপহার। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে আমাদের এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং যখনি প্রয়োজন সর্বাত্মক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। তিনিও আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বিভিন্ন উদ্যোগে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সাংগঠনিক পরিধি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সারাদেশে বিস্তার লাভ করে মীর মোশাররেফ হোসেনের প্রেরণায় ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায়।
২০০১ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সকল জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, জাতীয় কর্ম্শালার মত বড় বড় আয়োজন করা হতো বত্রিশ নম্বরে। সকল অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। তখন বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার কার্য্ক্রম দেখে এই সংগঠন বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রিয় সংগঠনে রূপান্তিরত হয়্ এবং তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের জন্য জাদুঘরের একটি কক্ষ ব্যবস্থা করে দেন। মূল জাদুঘরের পেছনে নির্মিত ভবনে আমাদের অফিস হিসেবে ব্যবহারের কথাও দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নির্মানাধীন ভবনে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কাজ পরিচালিত হয়।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা গ্রেফতার হবার পর কোন এক অজ্ঞাত কারণে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর কর্ত্পৃক্ষ বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সাংস্কৃতিক কার্য্ক্রম পরিচালনা বন্ধ করেন।
তখন আমরা এক প্রকার ঠিকানাহীন হয়ে পড়ি। সংগঠনের সাংগঠনিক যোগাযোগের কোন ঠিকানা না থাকায়, পাকবীর ভাই তাঁরই প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয় ৯৩, মতিঝিলে কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অফিস বরাদ্দ করেন।
তবে তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে কঠিন সময়টা এসেছিল ২০০৭ সালের ১৬ই জুলাই। সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কূটচালে গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুতনয়া ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর এই গ্রেফতার মানসিকভাবে শক্তিহীন করে ফেলে আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মীকে। কিন্তু এই মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরের অনুপ্রেরণাতেই বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার নেতাকর্মীরা মনোবল হারায়নি। তাঁরই উৎসাহে সেই বৈরী পরিবেশে এই সংগঠন হাতে নেয় এক সাহসী কর্মসূচী।
জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন কারাবন্দী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তিহন। মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর বললেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নেত্রীর মুক্তির দোয়া মাহফিল করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু অনেকেই পরিস্থিতি বিবেচনায় খুব একটা উৎসাহিত হচ্ছিল না। কিন্তু, প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সাথে পরামর্শ করে তিনি জানালেন, এবারের কর্মসূচী হবে জননেত্রীর সুস্থতা ও কারামুক্তির জন্য রোজা, দোয়া ও ইফতার কর্মসূচী। আর এটি পালন করা হবে সারা দেশজুড়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে। ঢাকায় এই আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয় স্কয়ার হাসপাতালের উল্টোদিকেই লাগোয়া একটি মসজিদে। কিন্তু যেদিন এই কর্মসূচী পালনের কথা সেদিনই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে পরিকল্পনায় আসে পরিবর্তন। তখন ঠিক করা হয় ইফতার ও দোয়ার আয়োজনটি হবে ধানমণ্ডি ৩ নম্বরে অবস্থিত জননেত্রীর কার্যালয়ে।
২।
সেই কার্যালয়ে গেলে জানা যায়, নেত্রী গ্রেফতার হবার পর থেকে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী সেই কার্যালয়ে যায়নি। কেয়ারটেকারের সহযোগিতায় আমরাই সেই কার্যালয়ে প্রায় দুইশ জনেরও অধিক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে জননেত্রীর সুস্থতা ও কারামুক্তির জন্য দোয়া মাহফিল ও ইফতারের আয়োজন করি।
ওই নিদারুণ আতঙ্কের দিনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে আসেননি। শুধুমাত্র ঝুঁকির পরোয়া না করে এসেছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারী এবং বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ এমপি। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার মনজুসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতারাও ছিলেন অনুপস্থিত। সরব উপস্থিতি ছিল আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরের। সেদিন তাঁদের সাথে সাথে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও রোজা রেখেছিল। এই আয়োজনটি শুধুমাত্র প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পরামর্শেই নয় বরং তাঁর একক পৃষ্ঠপোষকতাতেই করা হয়। আর আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি, ওই কার্যক্রমের মাধ্যমেই শুধু বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলাই নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গসংগঠনের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে কর্মকাণ্ডের শুরু।
এমন অনেক সাহসী ও চিন্তাশীল কর্মকাণ্ডেরই প্রধান উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর। এরপর ২০১৩ সালেও তাঁরই উদ্যোগে সারা দেশের নেতাকর্মীদের নিয়ে আরেকটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে মেলার উপদেষ্টা, নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও নবীণ অনেক নেতাদের সমাগম হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার একাডেমীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫টি বইয়ের একটি সিলেবাস প্রবর্তন করা হয়েছিল। মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর একাডেমীর অনেক শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ পৃষ্ঠপোষকতায় এই বইগুলো বিতরণ করেছেন।
২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস। সেই দিবসের সরকারী এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে।নিরক্ষরমূক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের আহবান জানান।
মুজিবকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা সেই মাসের ২৮ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে মেলার ১জন কর্মী ১জন নিরক্ষর শিশুকে অক্ষরদান করার কর্মসূচি নেয়া হয়। কর্মসূচির নাম দেয়া হয় ‘নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ’। এই কর্মসূচির প্রস্তাবও করেছিলেন মেলার বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাঁর সহযোগিতায় প্রায় ৫০০ নিরক্ষর শিশু কিশোরকে নিয়ে ধানমণ্ডি বত্রিশ প্রাঙ্গনে অক্ষরজ্ঞান প্রদানের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। এমন অনেক ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাণ্ডেরই পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক ও উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।
বৈরি পরিবেশে সাংগঠনিক কাজ চালাতে সবচেয়ে বেশী অসুবিধা হয় অর্থের। তিনি সেই সমাধানও সাধ্যের মধ্যে করে আসছেন বলেই এই বিশ বছরে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা তার অবস্থান সারাদেশে সুসংহত করতে পেরেছে এবং সংগঠনের ক্রমাগত উন্নতি সাধিত হয়েছে।
মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরঃ প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ১৯ বছর
————————————————————————-
মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর প্রথমবারের মতো প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন ২০০১ সালের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে আরো চারটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৪ ও ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ইন্জিনিয়াস্র্ ইন্সটিটউশন মিলনায়তনে। দুটি সম্মেলনেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এই দুটি সম্মেলনে গঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠনে তাঁর অবদান এবং আওয়ামী লীগের বিরোধী দলে থাকাকালীন তাঁর সাহসী ভূমিকা ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা বিবেচনায় তিনি সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দায়িত্ব ছেড়ে দেতে চেয়েছিলেন এই ত্যাগী ও নিঃস্বার্থ প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর। তিনি বলেছিলেন, এখন দল ক্ষমতায় এসেছে, সকলের সুদিন। এখন পদ-পদবী নিয়ে নানা কাড়াকাড়ি দেখা দিবে। আমি এখন আর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকতে চাই না। বরং উপদেষ্টা থেকে সংগঠনের জন্য কাজ করে যাব। আর আবারও যদি দুর্দিন আসে, তাহলে আবারও এই দায়িত্ব নেবো।
কিন্তু, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার নেতাকর্মীরা এটা মেনে নিতে পারেনি। তাই আমি মিয়া মনসফ, এই সংগঠনের সভাপতি এবং তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার মনজু তার বাসায় গিয়ে তাকে বলি, সংগঠনের দুর্দিনে আপনি ছিলেন, এখনও আপনাকেই থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের অনুরোধে তিনি এই গুরুদায়িত্ব পালন করে যেতে সম্মত হন।
২০১০ সালে জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের কথা থাকলেও নানা কারণে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সভায় পুণরায় মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হন। ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনগুলোতেও নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি পুনরায় মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরকেই প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত করে।
মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর বার বার বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচিত হবার মধ্য দিয়ে সংগঠনের প্রতি তাঁর ভালোবাসার এবং সংগঠনের সারাদেশের নেতাকর্মীদের তাঁর প্রতি অপার আস্থারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
অত্যন্ত পরিপাটি ছিল ২০১২ সালের কর্মশালা
২০১২ সালে একটি সু-শৃংখল ও পরিপাটি কর্মশালার আয়োজন করা হয় মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরের অনুপ্রেরণায়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিশাল মিলনায়তনে এই কর্ম্শালার আয়োজন করা হয়। সেই সমেমলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালিন বানিজ্যমন্ত্রী কর্ণেল(অবঃ) ফারুক খান এমপি। কর্ম্শালায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, মেলার উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সারাহ বেগম কবরী, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায্র্ ড. আলমগীর হোসেন, মেলার প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবদুস সোবহান।
সংগঠনকে সুসংহত করতে সারাদেশ সফরে বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা
————————————————————————————
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার তৃণমূলে শক্তি যোগাতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক সফরের কোন বিকল্প নেই। বিষয়টি মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর সব সময় উপলব্ধি করতেন। ফলে সংগঠনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সম্পৃক্ত হবার সাথে সাথেই তিনি সারাদেশে সংগঠনের কর্মকাণ্ড বাড়াতে সফরের উপর জোর দেন। সংগঠনের যেকোনো অনুষ্ঠান আর কার্যক্রমে তাই সারাদেশেই ছিল তাঁর পদচারনা।
৩।
২০০৫ সালে প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরকে সাথে নিয়ে মেগা সফর করে কেন্দ্রীয় কমিটি । ৭ বিভাগের এই সফরে সারাদেশে মেলার শক্ত ভিত গড়ে উঠে। একই গাড়িতে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সফর করে দেশব্যাপী। আজ অবধি সাংগঠনিক সফর অব্যহত আছে বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষকের সহযোগিতা, আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রেরণায়।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বেশ ক’বছর ধরে প্রশংসনীয় কাজ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। তাঁর প্রেরণা পেয়ে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার শেকড় গোপালগঞ্জের প্রতিটি থানায় প্রোথিত করেছি। ফলে টুঙ্গিপাড়ায় বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজন ঢাকার চেয়েও সহজ হয়েছে।
সংগঠনের প্রকাশনায় প্রধান পৃষ্ঠপোষকের অবদান
——————————————-
বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কয়েক বছর পরপর স্মরণিকা প্রকাশ করা হচ্ছিল। তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই এই প্রকাশনা নিয়মিত হয়। একটি প্রকাশনা বের করতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। অনেক সংগঠনই এর জন্য দাতাদের দারে দারে ঘুরতে থাকে। কিন্তু প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর প্রায় সবসময়েই আমাদেরকে এই কষ্টটি থেকে মুক্ত রেখেছেন। তাঁর একক আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার বেশ কয়েকটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। আর্থিক সহায়তা ছাড়াও তিনি তাঁর পরামর্শ ও সময় দিয়ে এই প্রকাশনাগুলোকে সমৃদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
২০১৭ সালে তাঁর একক আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে প্রকাশিত হয় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা স্মারকগ্রন্থ’। এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা আয়োজিত জননেত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।
এরপর ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন এবং ২০২০ সালে শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আবারও তাঁর একক পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অপার পরিশ্রমে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা ও কিশোর বাংলা’র সৌজন্যে প্রকাশিত হয় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – শততম জন্মস্মারকগ্রন্থ’। এটিরও মোড়ক উন্মোচন হয় টুঙ্গিপাড়ায়। সবাই যখন নানা সুবিধার খোঁজে তাদের কার্যক্রম রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আশেপাশেই সীমাবদ্ধ করে ফেলছে, সেখানে মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর নিজের মূল্যবান সময়, মেধা ও অর্থ ব্যয় করে বারে বারে ছুটে গেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান পুণ্যভূমি টুঙ্গিপাড়ায়।
শেষকথা
——————–
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর এই সংগঠনের স্বার্থে নির্দ্বিধায় নিজের মেধা, মনন, অর্থ ও সময় ব্যয় করে এসেছেন। বিনিময়ে তিনি কোন স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছেন তা বোধ হয় তাঁর কোন সমালোচকও বলতে পারবে না।
তাই, তাঁর কাছ থেকে আমাদের এই সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অনেক কিছুই শেখার আছে। আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমাদের সংগঠনের যে পথচলা, সেখানে মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীরকে আমরা সবসময়ই অভিভাবক হিসেবে পাবো। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলায় তাঁর অবদানের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সকল নেতাকর্মীরা কৃতজ্ঞতার সাথে চিরদিন মনে রাখবে। আমরা তাঁর ও তাঁর পরিবারের দীর্ঘায়ু, সুস্থতা ও উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করি।